শুক্রবার, জুলাই ০৪, ২০১৪

ফোন চার্জ নিয়ে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

ডেস্ক রিপোর্ট: আমরা প্রায়শ শুনে থাকি- ‘চার্জকালে ফোন ব্যবহার করবেন না’, ‘সারারাত ধরে মোবাইলে চার্জে দিয়ে রাখবেন না’ এবং ‘সম্পূর্ণ শেষ না হলে মোবাইল চার্জে দেবেন না’। বিশেষ করে চার্জকালে বিস্ফোরণের ঘটনায় আপনার মনে হতে পারে এ কথাগুলো ঠিক। এ ধরনের কিছু মিথ প্রচলিত আছে। তবে ব্যাটারি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম-কানুন যে নেই তা নয়। তাই ব্যবহারের আগে আপনার ফোন চার্জের নিয়মগুলো পড়ে নিন। তা অযথা গুজব ও সন্দেহ থেকে আপনাকে স্বস্তি দেবে। স্যামসাং ও অ্যাপলের মতো বড় প্রতিষ্ঠানসহ বেশির ভাগ ফোনে লিথিয়াম আয়রন ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ সব ব্যাটারির গড় আয়ু ৩ থেকে ৫ বছর। সঠিকভাবে যত্ম নিয়ে ব্যাটারির আয়ু যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারেন।

এবার দেখা যাক প্রতিষ্ঠিত ৫টি মিথের পেছনে কি রয়েছে-

অফ ব্রান্ড চার্জার ব্যাটারিকে ধ্বংস করে : এটা ঠিক যে সস্তা অফ ব্রান্ড ব্যাটারি থেকে আপনি প্রত্যাশামতো সেবা পাবেন না। এটা মোটামুটি ভালোই কাজ করে। এ ছাড়া আছে নকল চার্জার। সব ক্ষেত্রে মনে রাখুন নকল জিনিস এড়িয়ে চলা উচিত। চার্জার এমনিতেই দামি কোনো পণ্য নয়। তাহলে কেন অফ ব্রান্ড বা নকল পণ্য কিনতে যাবেন? এক পরীক্ষায় দেখা গেছে অফ ব্রান্ড ও নকল চার্জার কোনোভাবেই অফিসিয়াল চার্জারের চেয়ে ভালো কাজ করে না।

চার্জকালে ফোন ব্যবহার ঠিক নয় : আপনার ফোন যে কোনো সময় ব্যবহার করতে পারবেন। তবে থার্ড পার্টির বানানো চার্জার ব্যবহারকালে নয়। এ মিথের পেছনে একটি ঘটনা আছে। ২০১৩ সালের জুলাই মাসে চার্জ করার সময় মা আইলুন নামের এক চাইনিজ ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট আইফোন-৪ ব্যবহার করছিলেন। তখন ফোনটি বিস্ফোরিত হয়। পরে দেখা গেছে তিনি আইফোনের আসল চার্জার ব্যবহার করছিলেন না। সম্প্রতি এ ধরনের আরেকটি ঘটনা ঘটেছে। তাই বলা যায়, যদি প্রস্তুতকারক অনুমোদিত চার্জার ও ব্যাটারি ব্যবহার করেন তবে ঠিক আছে।

সারারাত চার্জ করলে ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যায় : যদি এমনই ভেবে থাকেন তাহলে জেনে রাখুন ফোন আপনার চেয়েও স্মার্ট। ব্যাটারির চার্জ সম্পূর্ণ হলে এতে চার্জের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাটারি সে সময় ব্যবহৃত হয় না। তার মানে এ নয় যে, আপনি প্রতিদিন সারারাত ধরে ফোন চার্জে দিয়ে রাখবেন। ব্যাটারির জীবনীশক্তি ঠিক রাখতে চাইলে চার্জ ৪০ থেকে ৮০ ভাগের মধ্যে করুন।

কখনও মোবাইল বন্ধ রাখার দরকার নেই : আপনার ফোন একটি মেশিন। তারও বিরতির দরকার আছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো ব্যাটারির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চাইলে নিয়মিত ফোন বন্ধ রাখুন। বিশেষ করে ঘুমানোর সময় কাজটি করলে আপনারও সুবিধা হয়। এটা সম্ভব না হলে, সপ্তাহে অন্তত একবার কিছু সময়ের জন্য মোবাইল বন্ধ রাখুন। এতে অ্যানড্রয়েড ডিভাইস ভালো থাকে। সামান্য রিবুট ব্যাটারির জীবনশক্তি নবায়ন করে দেয়।

একদম শূন্য অবস্থা থেকে ব্যাটারি চার্জ করা : চার্জ দেওয়া অবস্থায় লিথিয়াম আয়রন ব্যাটারি সবচেয়ে বেশি ভালো থাকে। আপনি যদি নিয়মিত শূন্য অবস্থায় চার্জ করেন, তা ব্যাটারিকে ভারসাম্যহীন করে দেয়। ব্যাটারিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জ সার্কেল থাকে। একবার পুরোপুরি চার্জ শূন্য হলে আরেকটি সার্কেল বা চক্র শুরু হয়। তাই একদম শূন্য অবস্থার জন্য অপেক্ষা করবেন না।

সোমবার, জুন ০৯, ২০১৪


সাভার ট্রাজেডি: ‘রানা’-রা কি পার পেয়েই যাবে???



মো: আসাদুজ্জামান: পৃথিবীর সকল নির্যাতিত-নিপড়িত, নিষ্পেষিত, শোষিত ও বঞ্চিত শ্রমিকের কাতারে নিজেকে দাড় করিয়ে রানা প্লাজা ধ্বংসে নিহত ও আহত সকল শ্রমিককে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। গত বছরের ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসে পড়ে। এতে নিহত হয় সহস্রাধিক মানুষ। আহত হয় দুই সহস্রাধিক শ্রমিক। এদের মধ্যে পঙ্গুত্ম বরণ করে অনেক শ্রমিক। নিহত শ্রমিকের পরিবারগুলো সাহায্য হিসেবে টাকা পেলেও এখনও ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি।

গত বছর ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসে অন্তত ১১৩০ জন নিহত হন, যাদের অধিকাংশই পোশাক শ্রমিক। ভবন ধ্বসের পরদিন সাভার মডেল থানায় রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল আহমেদ এ মামলা দায়ের করেন। যে মামলা দায়ের করা হয়েছে তাতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের সর্বোচ্চ দুই বছর শাস্তি হতে পারে।

রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে গত ২৫ এপ্রিল সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ওয়ালি আশলাফ খান অন্য মামলাটি দায়ের করেন। রানা, রানার বাবা আব্দুল খালেকসহ মোট ৬ জনকে ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন হতে পারে।



এদিকে ২৩ মার্চ ইমারত বিধি না মেনে সাভারের রানা প্লাজা নির্মাণ মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানাকে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগে ওই দিনই রাজউক বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় সোহেল রানার বিরুদ্ধে একটি মামলা করে।

অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে ছয়জনকে আসামি করে ২৫ এপ্রিল সাভার মডেল থানায় অপর মামলাটি করে পুলিশ। ওই বছরের ২৮ এপ্রিল সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চ রোববার এই আদেশ দেয়।

এ আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সেলিম বলেন, “রাজউকের করা মামলায় রানাকে আদালত ছয় মাসের জামিন দিয়েছে। পুলিশের করা অপর মামলাতেও রানা জামিন চেয়েছিলেন। তবে সেই আবেদন ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।”

এ মামালায় গ্রেপ্তার রানার বাবাকেও গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর জামিন দিয়েছিল হাইকোর্ট।

রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনায় দুই মামলার তদন্ত ১ বছরেও শেষ হয়নি। তাহলে কী রানাসহ যাদের আটক করা হয়েছে তা কী শুধু মানুষ দেখানো? গত দুইদিন আগে রানার বাবা একটি রাজনৈতিক দলে যোগদান করেছেন। তাকে আবার সাদরে গ্রহণ করা হয়ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে তার এবং তার ছেলে রানার কিছুই হবে না।








শ্রমিকের ঘামে যেসব বিত্তশালীরা সম্পদের পাহাড় গড়ছে তারা কী কোনদিন শ্রমের সঠিক মূল্য দেবে না? বঞ্চিত অসহায় যেসব শ্রমিক প্রতিনিয়ত ঘাম ঝড়াচ্ছে, শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও সচল রাখছে আমাদের অর্থনীতির চাকা অন্তত ঘাম ঝড়ানোর জন্য একটা নিরাপদ কর্মক্ষেত্রের নিশ্চয়তা মত নূন্যতম দাবি কি পূরণ হবে না? আমাদের দেশের আইন কী এই এতগুলো মানুষের হত্যার জন্য কী কোন সাজা দেবে না?

হয়তো ভবন ধ্বংসে নিহত শ্রমিকের আত্মা বিচারের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াবে। লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী
‘রানা’-রা কি পার পেয়েই যাবে???
আসাদুজ্জামান, সাতক্ষীরা: পৃথিবীর সকল নির্যাতিত-নিপড়িত, নিষ্পেষিত, শোষিত ও বঞ্চিত শ্রমিকের কাতারে নিজেকে দাড় করিয়ে রানা প্লাজা ধ্বংসে নিহত ও আহত সকল শ্রমিককে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। গত বছরের ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসে পড়ে। এতে নিহত হয় সহস্রাধিক মানুষ। আহত হয় দুই সহস্রাধিক শ্রমিক। এদের মধ্যে পঙ্গুত্ম বরণ করে অনেক শ্রমিক। নিহত শ্রমিকের পরিবারগুলো সাহায্য হিসেবে টাকা পেলেও এখনও ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি।

গত বছর ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসে অন্তত ১১৩০ জন নিহত হন, যাদের অধিকাংশই পোশাক শ্রমিক। ভবন ধ্বসের পরদিন সাভার মডেল থানায় রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল আহমেদ এ মামলা দায়ের করেন। যে মামলা দায়ের করা হয়েছে তাতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের সর্বোচ্চ দুই বছর শাস্তি হতে পারে।

রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে গত ২৫ এপ্রিল সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ওয়ালি আশলাফ খান অন্য মামলাটি দায়ের করেন। রানা, রানার বাবা আব্দুল খালেকসহ মোট ৬ জনকে ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন হতে পারে।

এদিকে ২৩ মার্চ ইমারত বিধি না মেনে সাভারের রানা প্লাজা নির্মাণ মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানাকে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগে ওই দিনই রাজউক বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় সোহেল রানার বিরুদ্ধে একটি মামলা করে।

অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে ছয়জনকে আসামি করে ২৫ এপ্রিল সাভার মডেল থানায় অপর মামলাটি করে পুলিশ। ওই বছরের ২৮ এপ্রিল সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চ রোববার এই আদেশ দেয়।

এ আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সেলিম বলেন, “রাজউকের করা মামলায় রানাকে আদালত ছয় মাসের জামিন দিয়েছে। পুলিশের করা অপর মামলাতেও রানা জামিন চেয়েছিলেন। তবে সেই আবেদন ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।”

এ মামালায় গ্রেপ্তার রানার বাবাকেও গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর জামিন দিয়েছিল হাইকোর্ট।

রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনায় দুই মামলার তদন্ত ১ বছরেও শেষ হয়নি। তাহলে কী রানাসহ যাদের আটক করা হয়েছে তা কী শুধু মানুষ দেখানো? গত দুইদিন আগে রানার বাবা একটি রাজনৈতিক দলে যোগদান করেছেন। তাকে আবার সাদরে গ্রহণ করা হয়ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে তার এবং তার ছেলে রানার কিছুই হবে না।

শ্রমিকের ঘামে যেসব বিত্তশালীরা সম্পদের পাহাড় গড়ছে তারা কী কোনদিন শ্রমের সঠিক মূল্য দেবে না? বঞ্চিত অসহায় যেসব শ্রমিক প্রতিনিয়ত ঘাম ঝড়াচ্ছে, শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও সচল রাখছে আমাদের অর্থনীতির চাকা অন্তত ঘাম ঝড়ানোর জন্য একটা নিরাপদ কর্মক্ষেত্রের নিশ্চয়তা মত নূন্যতম দাবি কি পূরণ হবে না? আমাদের দেশের আইন কী এই এতগুলো মানুষের হত্যার জন্য কী কোন সাজা দেবে না?

হয়তো ভবন ধ্বংসে নিহত শ্রমিকের আত্মা বিচারের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াবে। লেখক: শিক্ষার্থী, শ্রমিক, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী
- See more at: http://swadesh24.com/details.php?id=27269#sthash.IDd4r9lJ.wPq8qUDc.dpuf
‘রানা’-রা কি পার পেয়েই যাবে???
আসাদুজ্জামান, সাতক্ষীরা: পৃথিবীর সকল নির্যাতিত-নিপড়িত, নিষ্পেষিত, শোষিত ও বঞ্চিত শ্রমিকের কাতারে নিজেকে দাড় করিয়ে রানা প্লাজা ধ্বংসে নিহত ও আহত সকল শ্রমিককে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। গত বছরের ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসে পড়ে। এতে নিহত হয় সহস্রাধিক মানুষ। আহত হয় দুই সহস্রাধিক শ্রমিক। এদের মধ্যে পঙ্গুত্ম বরণ করে অনেক শ্রমিক। নিহত শ্রমিকের পরিবারগুলো সাহায্য হিসেবে টাকা পেলেও এখনও ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি।

গত বছর ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসে অন্তত ১১৩০ জন নিহত হন, যাদের অধিকাংশই পোশাক শ্রমিক। ভবন ধ্বসের পরদিন সাভার মডেল থানায় রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল আহমেদ এ মামলা দায়ের করেন। যে মামলা দায়ের করা হয়েছে তাতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের সর্বোচ্চ দুই বছর শাস্তি হতে পারে।

রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে গত ২৫ এপ্রিল সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ওয়ালি আশলাফ খান অন্য মামলাটি দায়ের করেন। রানা, রানার বাবা আব্দুল খালেকসহ মোট ৬ জনকে ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন হতে পারে।

এদিকে ২৩ মার্চ ইমারত বিধি না মেনে সাভারের রানা প্লাজা নির্মাণ মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানাকে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগে ওই দিনই রাজউক বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় সোহেল রানার বিরুদ্ধে একটি মামলা করে।

অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে ছয়জনকে আসামি করে ২৫ এপ্রিল সাভার মডেল থানায় অপর মামলাটি করে পুলিশ। ওই বছরের ২৮ এপ্রিল সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চ রোববার এই আদেশ দেয়।

এ আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সেলিম বলেন, “রাজউকের করা মামলায় রানাকে আদালত ছয় মাসের জামিন দিয়েছে। পুলিশের করা অপর মামলাতেও রানা জামিন চেয়েছিলেন। তবে সেই আবেদন ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।”

এ মামালায় গ্রেপ্তার রানার বাবাকেও গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর জামিন দিয়েছিল হাইকোর্ট।

রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনায় দুই মামলার তদন্ত ১ বছরেও শেষ হয়নি। তাহলে কী রানাসহ যাদের আটক করা হয়েছে তা কী শুধু মানুষ দেখানো? গত দুইদিন আগে রানার বাবা একটি রাজনৈতিক দলে যোগদান করেছেন। তাকে আবার সাদরে গ্রহণ করা হয়ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে তার এবং তার ছেলে রানার কিছুই হবে না।

শ্রমিকের ঘামে যেসব বিত্তশালীরা সম্পদের পাহাড় গড়ছে তারা কী কোনদিন শ্রমের সঠিক মূল্য দেবে না? বঞ্চিত অসহায় যেসব শ্রমিক প্রতিনিয়ত ঘাম ঝড়াচ্ছে, শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও সচল রাখছে আমাদের অর্থনীতির চাকা অন্তত ঘাম ঝড়ানোর জন্য একটা নিরাপদ কর্মক্ষেত্রের নিশ্চয়তা মত নূন্যতম দাবি কি পূরণ হবে না? আমাদের দেশের আইন কী এই এতগুলো মানুষের হত্যার জন্য কী কোন সাজা দেবে না?

হয়তো ভবন ধ্বংসে নিহত শ্রমিকের আত্মা বিচারের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াবে। লেখক: শিক্ষার্থী, শ্রমিক, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী
- See more at: http://swadesh24.com/details.php?id=27269#sthash.IDd4r9lJ.wPq8qUDc.dpuf

সোমবার, জানুয়ারী ২০, ২০১৪

বদনাম নিয়েও কাজে ছুটেন মফস্বল সাংবাদিকরা

মাহাবুর আলম সোহাগ
ঢাকা: দেখতে দেখতে প্রায় এক যুগের কাছাকাছি পৌঁছেছে আমার সাংবাদিকতার বয়স। অথচ নিজের বয়স দুই যুগের একটু বেশি। বলতে গেলে ছোটবেলা থেকেই এ পেশার সঙ্গে জড়িত।

দীর্ঘদিন নিজ জেলায় সাংবাদিকতা করেছি, বিনিময়ে মানুষের কাছ থেকে পেয়েছি ‘হাস্যকর’ কথাবার্তা আর ‘বদনাম’। অনেকে হেয় করে ‘সাংঘাতিক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে আমার অনেক বন্ধু-বান্ধুবও রয়েছেন, যারা প্রতিনিয়ত আমাকে ‘সাংঘাতিক’ বলে ডেকেছেন।

জানি না, এই বদনামটির পেছনের রহস্যটা কি? কেন সাংবাদিকদের দেখলে মানুষ এ কথাটি বলে থাকেন? কি মজা পান?
একজন প্রকৃত সাংবাদিকের ‘সাংঘাতিক’ কথাটি শুনতে নিশ্চয়ই অনেক অপমান বোধ হয়। শুনতে অনেক কষ্ট লাগে। আমি দেখেছি, কোনো সাংবাদিকই এ কথাটির জোরালো প্রতিবাদ করেন না। কারণ, তারা মনে করেন, এর প্রতিবাদ করলেই বড় কোনো ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই তারা হাসি মুখে কষ্ট করে হলেও কথাটি শুনে চুপ করে থাকেন।
এটি নিশ্চয়ই স্রেফ ভদ্রতা দেখানো ছাড়া অন্য কিছু নই। তাই বলবো, কারও পেশা নিয়ে বা কারও রুজি-রোজগার নিয়ে এমনটি বলা উচিত না। কারণ, প্রতিটি মানুষের কাছে তার পেশা অনেক ভালোবাসার। আমি তো মনে করি, এ পেশার মানুষগুলোকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করা উচিত। কারণ, প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে সাংবাদিকদের কাজের কারণে সুফল ভোগ করছেন। যা হয়তো তারা কোনোভাবেই বুঝতে পারছেন না।

আমি দেখেছি, এ পেশার মানুষগুলোকে সহযোগিতা বা উৎসাহ দেওয়ার মতো মানুষের অভাব রয়েছে, কিন্তু পদে পদে অপমান আর নিরুৎসাহিত করার মানুষের অভাব নেই।
একদিকে মফস্বল সাংবাদিকদের যেমন মূল্যায়ন করেন না স্থানীয় মানুষগুলো, অন্যদিকে একই অবস্থা তাদের প্রধান কার্যালয়ের ক্ষেত্রেও। আমার ক্ষেত্রেও যা হয়েছে। দেখা গেছে, কোনো অনুষ্ঠান বা সভা-সেমিনারে গেলে সাংবাদিকদের সংবাদ পাঠানোর জন্য সামান্য অর্থের ব্যবস্থা করে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান। যদিও এ ব্যবস্থাটি কিছু মানুষ বিরাট দুর্নীতি মনে করেন। আসলে সেটি ‘সন্মানী’ ছাড়া অন্য কিছু নই।

যারা এটিকে দুর্নীতি মনে করেন, আমি তাদের বলছি, বাংলাদেশের অধিকাংশ মিডিয়া তাদের জেলা বা উপজেলা প্রতিনিধিদের কিছুই দেন না। অফিস থেকে মাঝে মধ্যে ফোন করে যেটা দেন, সেটা হলো ঝাড়ি আর চাকরি কেড়ে নেওয়ার হুমকি।
তবে মফস্বল সাংবাদিকদের দুর্নীতিবাজ মনে করার পেছনে কিছু কারণও রয়েছে। কিছু কিছু মানুষ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কিছু হলুদ সাংবাদিক ও সাংবাদিক নামধারীদের দ্বারস্থ হয়ে থাকেন। তাদের সঙ্গে যোগসাজশে টাকার বিনিময়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে থাকেন ওই অপ ও হলুদ সাংবাদিকরা।

পরবর্তীতে হয়রানির শিকার ভুক্তভোগী ওই মানুষগুলোর সাংবাদিকের ওপর থেকেই আস্থা নষ্ট হয়ে যায়। তাদের অনেকেও তখন সাংবাদিকমাত্রই সকলকে ‘সাংঘাতিক’ উপাধি দেন।
অন্যদিকে, বিভিন্ন ঘটনায় কোনো কোনো ভুক্তভোগী মানুষ কোনো সাংবাদিকের কাছে তার দুঃখ-কষ্টের কথা মিডিয়ায় তুলে ধরার আগে জানতে চান, কত টাকা দিতে হবে সংবাদ প্রকাশ-প্রচার করতে। অনেক ক্ষেত্রে এসব বদনামের জন্য আমারা নিজেরাই দায়ী। কারণ, ওই যে অপ ও হলুদ সাংবাদিক বা সাংবাদিক নামধারীরাও যে আমাদের কমিউনিটিরই অংশ।
যে কথা বলছিলাম, মফস্বল সাংবাদিকরা সংবাদ পাঠানোর জন্য যে প্রতিষ্ঠান থেকে সামান্য সন্মানী পেয়ে থাকেন, সেটাকে হালাল করার জন্য তড়িঘড়ি করে সংবাদ তৈরি করে অফিসে পাঠাতে হয়। যেহেতু তারা সামান্য সন্মানী পেয়ে থাকেন, সেহেতু চক্ষুলজ্জার তাগিদে সংবাদটা পাঠানোর পর অফিসে ফোন দিয়ে অনুরোধ করা হয়, সংবাদটি পরের দিনের পত্রিকায় প্রকাশের জন্য। অফিসে ফোন করার পর আরেক বিপদ। তারা বলেন, ‘‘কেন আপনি অনুরোধ করবেন? আপনি জানেন না, পত্রিকায় জায়গা কম? আপনি সংবাদ পাঠিয়েছেন, আপনার কাজ শেষ, সংবাদটা যাবে কি, যাবে না এটা আমাদের ব্যাপার।’’

এরপর আবার ওই প্রতিনিধিকে নিয়ে অফিসের লোকজনই শুরু করেন নানান কথা। তাদের ধারণা, মফস্বলের সাংবাদিকদের প্রচুর আয়। তারা যেখানেই যান, সেখানেই টাকা পান। কিন্তু বাস্তবে কি তাই? তবে সন্মানী দেওয়া ওই প্রতিষ্ঠানের সংবাদটা যার পত্রিকায় আসে তিনি তো হাসি মুখে পত্রিকা নিয়ে সেই প্রতিষ্ঠান বা লোকজনকে দিয়ে আসেন। কিন্তু যার পত্রিকায় সংবাদটা আসে না, তিনি পড়েন মহাবিপদে। কারণ, সংবাদ পাঠানোর টাকা পেয়েছি, অথচ সংবাদটা ছাপিয়ে দিতে পারলাম না এটা তখন অনেক লজ্জার বিষয় হয়ে দাড়ায়। ওই প্রতিষ্ঠানের সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর কোনো মুখ থাকে না। তখন চক্ষুলজ্জার খাতিরে অনেকটা পালিয়ে বেড়ানোর মতো অবস্থা হয়।

অন্যদিকে, ওই প্রতিষ্ঠান তো সংবাদটির জন্য অস্থির। তারাও বার বার ফোন করেন, কিন্তু পত্রিকায় তো সংবাদই নেই, ফোন ধরে বলবো কি? এসব কারণে ওই সাংবাদিকের প্রতি তাদের আস্থাও নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে আর দাওয়াত পাওয়া যায় না।

এভাবেই দরজা বন্ধ হয়ে যায় মফস্বল সাংবাদিকদের। অন্যদিকে বদনামের দরজাগুলো খুলে যায়। তারপরও শত বঞ্চনার মাঝেও নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য লেগে থাকেন তারা সাংবাদিকতায়। কারণ, পেশাটিতে একটি মোহ আছে, ভালোবাসা আছে। কোনোভাবেই ছেড়ে থাকা যায় না এ পেশাকে।



লেখক : মাহাবুর আলম সোহাগ, সহকারী বার্তা সম্পাদক, রাইজিংবিডি, ০১৯১১-৯৪৪৬৬৮
বদনাম নিয়েও কাজে ছুটেন মফস্বল সাংবাদিকরা
মাহাবুর আলম সোহাগ
ঢাকা: দেখতে দেখতে প্রায় এক যুগের কাছাকাছি পৌঁছেছে আমার সাংবাদিকতার বয়স। অথচ নিজের বয়স দুই যুগের একটু বেশি। বলতে গেলে ছোটবেলা থেকেই এ পেশার সঙ্গে জড়িত।
দীর্ঘদিন নিজ জেলায় সাংবাদিকতা করেছি, বিনিময়ে মানুষের কাছ থেকে পেয়েছি ‘হাস্যকর’ কথাবার্তা আর ‘বদনাম’। অনেকে হেয় করে ‘সাংঘাতিক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে আমার অনেক বন্ধু-বান্ধুবও রয়েছেন, যারা প্রতিনিয়ত আমাকে ‘সাংঘাতিক’ বলে ডেকেছেন।
জানি না, এই বদনামটির পেছনের রহস্যটা কি? কেন সাংবাদিকদের দেখলে মানুষ এ কথাটি বলে থাকেন? কি মজা পান?
একজন প্রকৃত সাংবাদিকের ‘সাংঘাতিক’ কথাটি শুনতে নিশ্চয়ই অনেক অপমান বোধ হয়। শুনতে অনেক কষ্ট লাগে। আমি দেখেছি, কোনো সাংবাদিকই এ কথাটির জোরালো প্রতিবাদ করেন না। কারণ, তারা মনে করেন, এর প্রতিবাদ করলেই বড় কোনো ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই তারা হাসি মুখে কষ্ট করে হলেও কথাটি শুনে চুপ করে থাকেন।
এটি নিশ্চয়ই স্রেফ ভদ্রতা দেখানো ছাড়া অন্য কিছু নই। তাই বলবো, কারও পেশা নিয়ে বা কারও রুজি-রোজগার নিয়ে এমনটি বলা উচিত না। কারণ, প্রতিটি মানুষের কাছে তার পেশা অনেক ভালোবাসার। আমি তো মনে করি, এ পেশার মানুষগুলোকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করা উচিত। কারণ, প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে সাংবাদিকদের কাজের কারণে সুফল ভোগ করছেন। যা হয়তো তারা কোনোভাবেই বুঝতে পারছেন না।
আমি দেখেছি, এ পেশার মানুষগুলোকে সহযোগিতা বা উৎসাহ দেওয়ার মতো মানুষের অভাব রয়েছে, কিন্তু পদে পদে অপমান আর নিরুৎসাহিত করার মানুষের অভাব নেই।
একদিকে মফস্বল সাংবাদিকদের যেমন মূল্যায়ন করেন না স্থানীয় মানুষগুলো, অন্যদিকে একই অবস্থা তাদের প্রধান কার্যালয়ের ক্ষেত্রেও। আমার ক্ষেত্রেও যা হয়েছে। দেখা গেছে, কোনো অনুষ্ঠান বা সভা-সেমিনারে গেলে সাংবাদিকদের সংবাদ পাঠানোর জন্য সামান্য অর্থের ব্যবস্থা করে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান। যদিও এ ব্যবস্থাটি কিছু মানুষ বিরাট দুর্নীতি মনে করেন। আসলে সেটি ‘সন্মানী’ ছাড়া অন্য কিছু নই।
যারা এটিকে দুর্নীতি মনে করেন, আমি তাদের বলছি, বাংলাদেশের অধিকাংশ মিডিয়া তাদের জেলা বা উপজেলা প্রতিনিধিদের কিছুই দেন না। অফিস থেকে মাঝে মধ্যে ফোন করে যেটা দেন, সেটা হলো ঝাড়ি আর চাকরি কেড়ে নেওয়ার হুমকি।
তবে মফস্বল সাংবাদিকদের দুর্নীতিবাজ মনে করার পেছনে কিছু কারণও রয়েছে। কিছু কিছু মানুষ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কিছু হলুদ সাংবাদিক ও সাংবাদিক নামধারীদের দ্বারস্থ হয়ে থাকেন। তাদের সঙ্গে যোগসাজশে টাকার বিনিময়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে থাকেন ওই অপ ও হলুদ সাংবাদিকরা।
পরবর্তীতে হয়রানির শিকার ভুক্তভোগী ওই মানুষগুলোর সাংবাদিকের ওপর থেকেই আস্থা নষ্ট হয়ে যায়। তাদের অনেকেও তখন সাংবাদিকমাত্রই সকলকে ‘সাংঘাতিক’ উপাধি দেন।
অন্যদিকে, বিভিন্ন ঘটনায় কোনো কোনো ভুক্তভোগী মানুষ কোনো সাংবাদিকের কাছে তার দুঃখ-কষ্টের কথা মিডিয়ায় তুলে ধরার আগে জানতে চান, কত টাকা দিতে হবে সংবাদ প্রকাশ-প্রচার করতে। অনেক ক্ষেত্রে এসব বদনামের জন্য আমারা নিজেরাই দায়ী। কারণ, ওই যে অপ ও হলুদ সাংবাদিক বা সাংবাদিক নামধারীরাও যে আমাদের কমিউনিটিরই অংশ।
যে কথা বলছিলাম, মফস্বল সাংবাদিকরা সংবাদ পাঠানোর জন্য যে প্রতিষ্ঠান থেকে সামান্য সন্মানী পেয়ে থাকেন, সেটাকে হালাল করার জন্য তড়িঘড়ি করে সংবাদ তৈরি করে অফিসে পাঠাতে হয়। যেহেতু তারা সামান্য সন্মানী পেয়ে থাকেন, সেহেতু চক্ষুলজ্জার তাগিদে সংবাদটা পাঠানোর পর অফিসে ফোন দিয়ে অনুরোধ করা হয়, সংবাদটি পরের দিনের পত্রিকায় প্রকাশের জন্য। অফিসে ফোন করার পর আরেক বিপদ। তারা বলেন, ‘‘কেন আপনি অনুরোধ করবেন? আপনি জানেন না, পত্রিকায় জায়গা কম? আপনি সংবাদ পাঠিয়েছেন, আপনার কাজ শেষ, সংবাদটা যাবে কি, যাবে না এটা আমাদের ব্যাপার।’’
এরপর আবার ওই প্রতিনিধিকে নিয়ে অফিসের লোকজনই শুরু করেন নানান কথা। তাদের ধারণা, মফস্বলের সাংবাদিকদের প্রচুর আয়। তারা যেখানেই যান, সেখানেই টাকা পান। কিন্তু বাস্তবে কি তাই? তবে সন্মানী দেওয়া ওই প্রতিষ্ঠানের সংবাদটা যার পত্রিকায় আসে তিনি তো হাসি মুখে পত্রিকা নিয়ে সেই প্রতিষ্ঠান বা লোকজনকে দিয়ে আসেন। কিন্তু যার পত্রিকায় সংবাদটা আসে না, তিনি পড়েন মহাবিপদে। কারণ, সংবাদ পাঠানোর টাকা পেয়েছি, অথচ সংবাদটা ছাপিয়ে দিতে পারলাম না এটা তখন অনেক লজ্জার বিষয় হয়ে দাড়ায়। ওই প্রতিষ্ঠানের সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর কোনো মুখ থাকে না। তখন চক্ষুলজ্জার খাতিরে অনেকটা পালিয়ে বেড়ানোর মতো অবস্থা হয়।
অন্যদিকে, ওই প্রতিষ্ঠান তো সংবাদটির জন্য অস্থির। তারাও বার বার ফোন করেন, কিন্তু পত্রিকায় তো সংবাদই নেই, ফোন ধরে বলবো কি? এসব কারণে ওই সাংবাদিকের প্রতি তাদের আস্থাও নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে আর দাওয়াত পাওয়া যায় না।
এভাবেই দরজা বন্ধ হয়ে যায় মফস্বল সাংবাদিকদের। অন্যদিকে বদনামের দরজাগুলো খুলে যায়। তারপরও শত বঞ্চনার মাঝেও নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য লেগে থাকেন তারা সাংবাদিকতায়। কারণ, পেশাটিতে একটি মোহ আছে, ভালোবাসা আছে। কোনোভাবেই ছেড়ে থাকা যায় না এ পেশাকে।

লেখক : মাহাবুর আলম সোহাগ, সহকারী বার্তা সম্পাদক, রাইজিংবিডি, ০১৯১১-৯৪৪৬৬৮
- See more at: http://barta9.com/2014/01/11/%e0%a6%ac%e0%a6%a6%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%ae-%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a7%9f%e0%a7%87%e0%a6%93-%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a7%87-%e0%a6%9b%e0%a7%81%e0%a6%9f%e0%a7%87%e0%a6%a8-%e0%a6%ae%e0%a6%ab/#sthash.qEtLT3yZ.dpufhttp://barta9.com/2014/01/11/%E0%A6%AC%E0%A6%A6%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AE-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%93-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A7%87-%E0%A6%9B%E0%A7%81%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%AE%E0%A6%AB/
বদনাম নিয়েও কাজে ছুটেন মফস্বল সাংবাদিকরা
মাহাবুর আলম সোহাগ
ঢাকা: দেখতে দেখতে প্রায় এক যুগের কাছাকাছি পৌঁছেছে আমার সাংবাদিকতার বয়স। অথচ নিজের বয়স দুই যুগের একটু বেশি। বলতে গেলে ছোটবেলা থেকেই এ পেশার সঙ্গে জড়িত।
দীর্ঘদিন নিজ জেলায় সাংবাদিকতা করেছি, বিনিময়ে মানুষের কাছ থেকে পেয়েছি ‘হাস্যকর’ কথাবার্তা আর ‘বদনাম’। অনেকে হেয় করে ‘সাংঘাতিক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে আমার অনেক বন্ধু-বান্ধুবও রয়েছেন, যারা প্রতিনিয়ত আমাকে ‘সাংঘাতিক’ বলে ডেকেছেন।
জানি না, এই বদনামটির পেছনের রহস্যটা কি? কেন সাংবাদিকদের দেখলে মানুষ এ কথাটি বলে থাকেন? কি মজা পান?
একজন প্রকৃত সাংবাদিকের ‘সাংঘাতিক’ কথাটি শুনতে নিশ্চয়ই অনেক অপমান বোধ হয়। শুনতে অনেক কষ্ট লাগে। আমি দেখেছি, কোনো সাংবাদিকই এ কথাটির জোরালো প্রতিবাদ করেন না। কারণ, তারা মনে করেন, এর প্রতিবাদ করলেই বড় কোনো ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই তারা হাসি মুখে কষ্ট করে হলেও কথাটি শুনে চুপ করে থাকেন।
এটি নিশ্চয়ই স্রেফ ভদ্রতা দেখানো ছাড়া অন্য কিছু নই। তাই বলবো, কারও পেশা নিয়ে বা কারও রুজি-রোজগার নিয়ে এমনটি বলা উচিত না। কারণ, প্রতিটি মানুষের কাছে তার পেশা অনেক ভালোবাসার। আমি তো মনে করি, এ পেশার মানুষগুলোকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করা উচিত। কারণ, প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে সাংবাদিকদের কাজের কারণে সুফল ভোগ করছেন। যা হয়তো তারা কোনোভাবেই বুঝতে পারছেন না।
আমি দেখেছি, এ পেশার মানুষগুলোকে সহযোগিতা বা উৎসাহ দেওয়ার মতো মানুষের অভাব রয়েছে, কিন্তু পদে পদে অপমান আর নিরুৎসাহিত করার মানুষের অভাব নেই।
একদিকে মফস্বল সাংবাদিকদের যেমন মূল্যায়ন করেন না স্থানীয় মানুষগুলো, অন্যদিকে একই অবস্থা তাদের প্রধান কার্যালয়ের ক্ষেত্রেও। আমার ক্ষেত্রেও যা হয়েছে। দেখা গেছে, কোনো অনুষ্ঠান বা সভা-সেমিনারে গেলে সাংবাদিকদের সংবাদ পাঠানোর জন্য সামান্য অর্থের ব্যবস্থা করে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান। যদিও এ ব্যবস্থাটি কিছু মানুষ বিরাট দুর্নীতি মনে করেন। আসলে সেটি ‘সন্মানী’ ছাড়া অন্য কিছু নই।
যারা এটিকে দুর্নীতি মনে করেন, আমি তাদের বলছি, বাংলাদেশের অধিকাংশ মিডিয়া তাদের জেলা বা উপজেলা প্রতিনিধিদের কিছুই দেন না। অফিস থেকে মাঝে মধ্যে ফোন করে যেটা দেন, সেটা হলো ঝাড়ি আর চাকরি কেড়ে নেওয়ার হুমকি।
তবে মফস্বল সাংবাদিকদের দুর্নীতিবাজ মনে করার পেছনে কিছু কারণও রয়েছে। কিছু কিছু মানুষ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কিছু হলুদ সাংবাদিক ও সাংবাদিক নামধারীদের দ্বারস্থ হয়ে থাকেন। তাদের সঙ্গে যোগসাজশে টাকার বিনিময়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে থাকেন ওই অপ ও হলুদ সাংবাদিকরা।
পরবর্তীতে হয়রানির শিকার ভুক্তভোগী ওই মানুষগুলোর সাংবাদিকের ওপর থেকেই আস্থা নষ্ট হয়ে যায়। তাদের অনেকেও তখন সাংবাদিকমাত্রই সকলকে ‘সাংঘাতিক’ উপাধি দেন।
অন্যদিকে, বিভিন্ন ঘটনায় কোনো কোনো ভুক্তভোগী মানুষ কোনো সাংবাদিকের কাছে তার দুঃখ-কষ্টের কথা মিডিয়ায় তুলে ধরার আগে জানতে চান, কত টাকা দিতে হবে সংবাদ প্রকাশ-প্রচার করতে। অনেক ক্ষেত্রে এসব বদনামের জন্য আমারা নিজেরাই দায়ী। কারণ, ওই যে অপ ও হলুদ সাংবাদিক বা সাংবাদিক নামধারীরাও যে আমাদের কমিউনিটিরই অংশ।
যে কথা বলছিলাম, মফস্বল সাংবাদিকরা সংবাদ পাঠানোর জন্য যে প্রতিষ্ঠান থেকে সামান্য সন্মানী পেয়ে থাকেন, সেটাকে হালাল করার জন্য তড়িঘড়ি করে সংবাদ তৈরি করে অফিসে পাঠাতে হয়। যেহেতু তারা সামান্য সন্মানী পেয়ে থাকেন, সেহেতু চক্ষুলজ্জার তাগিদে সংবাদটা পাঠানোর পর অফিসে ফোন দিয়ে অনুরোধ করা হয়, সংবাদটি পরের দিনের পত্রিকায় প্রকাশের জন্য। অফিসে ফোন করার পর আরেক বিপদ। তারা বলেন, ‘‘কেন আপনি অনুরোধ করবেন? আপনি জানেন না, পত্রিকায় জায়গা কম? আপনি সংবাদ পাঠিয়েছেন, আপনার কাজ শেষ, সংবাদটা যাবে কি, যাবে না এটা আমাদের ব্যাপার।’’
এরপর আবার ওই প্রতিনিধিকে নিয়ে অফিসের লোকজনই শুরু করেন নানান কথা। তাদের ধারণা, মফস্বলের সাংবাদিকদের প্রচুর আয়। তারা যেখানেই যান, সেখানেই টাকা পান। কিন্তু বাস্তবে কি তাই? তবে সন্মানী দেওয়া ওই প্রতিষ্ঠানের সংবাদটা যার পত্রিকায় আসে তিনি তো হাসি মুখে পত্রিকা নিয়ে সেই প্রতিষ্ঠান বা লোকজনকে দিয়ে আসেন। কিন্তু যার পত্রিকায় সংবাদটা আসে না, তিনি পড়েন মহাবিপদে। কারণ, সংবাদ পাঠানোর টাকা পেয়েছি, অথচ সংবাদটা ছাপিয়ে দিতে পারলাম না এটা তখন অনেক লজ্জার বিষয় হয়ে দাড়ায়। ওই প্রতিষ্ঠানের সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর কোনো মুখ থাকে না। তখন চক্ষুলজ্জার খাতিরে অনেকটা পালিয়ে বেড়ানোর মতো অবস্থা হয়।
অন্যদিকে, ওই প্রতিষ্ঠান তো সংবাদটির জন্য অস্থির। তারাও বার বার ফোন করেন, কিন্তু পত্রিকায় তো সংবাদই নেই, ফোন ধরে বলবো কি? এসব কারণে ওই সাংবাদিকের প্রতি তাদের আস্থাও নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে আর দাওয়াত পাওয়া যায় না।
এভাবেই দরজা বন্ধ হয়ে যায় মফস্বল সাংবাদিকদের। অন্যদিকে বদনামের দরজাগুলো খুলে যায়। তারপরও শত বঞ্চনার মাঝেও নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য লেগে থাকেন তারা সাংবাদিকতায়। কারণ, পেশাটিতে একটি মোহ আছে, ভালোবাসা আছে। কোনোভাবেই ছেড়ে থাকা যায় না এ পেশাকে।

লেখক : মাহাবুর আলম সোহাগ, সহকারী বার্তা সম্পাদক, রাইজিংবিডি, ০১৯১১-৯৪৪৬৬৮
- See more at: http://barta9.com/2014/01/11/%e0%a6%ac%e0%a6%a6%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%ae-%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a7%9f%e0%a7%87%e0%a6%93-%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a7%87-%e0%a6%9b%e0%a7%81%e0%a6%9f%e0%a7%87%e0%a6%a8-%e0%a6%ae%e0%a6%ab/#sthash.qEtLT3yZ.dpuf